বিশেষ প্রতিনিধি সরকার নদী খনন ও ড্রেজিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও এ কাজে আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগই বেশি। বিশেষ করে মেগা প্রকল্পগুলোতে সামান্য অর্জনে অর্থের অপচয় হয়েছে অনেক বেশি।ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটির সারমর্ম তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটিতে নদী খননে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতার জন্য বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অদক্ষতা, উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর পরিচালকসহ (পিডি) যুক্ত জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীরা প্রকল্প এলাকায় না গিয়ে বছরের অধিকাংশ কর্মদিবসে ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করেন বলেও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।এসসিআরএফ জানায়, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে জামালপুরের নালিতাবাড়ী পর্যন্ত কংস ও ভোগাই নদীর ১৫৫ কিলোমিটার খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, নদী দুটির প্রশস্ততা ৮০ থেকে ১০০ ফুট এবং শুকনো মৌসুমে গভীরতা ৮ থেকে ১০ ফুট হবে। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। তবে সরেজমিনে এবং নদী-তীরবর্তী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কংস ও ভোগাই নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা মোটেও বাড়েনি। তাদের দাবি, ১৩৪ কোটি টাকার সিংহভাগই জলে গেছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও ঢাকা কার্যালয় অনুসন্ধান করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।এ ছাড়া ২০১৯ সালে পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের ২২৭ কিলোমিটার খনন শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পে বরাদ্দ ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। বলা হয়েছিল, চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সংযোগস্থল থেকে কিশোরগঞ্জের টোক পর্যন্ত প্রশস্ততা ৩০০ ফুট ও গভীরতা অন্তত ১০ ফুট হবে। এ নৌপথ দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত বড় নৌযান চলবে। তবে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে নদে হাঁটুপানি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সময়মতো কাজ শেষ না করে প্রকল্পের মেয়াদ আরও অন্তত তিন বছর বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।যমুনা নদীর গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত ফেরিপথ চালুর জন্য ২০১৭ সালে ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার প্রকল্প শুরু করেছিল সরকারি সংস্থাটি। তবে খনন শুরুর এক পর্যায়ে জানায়, এই নৌপথে ফেরি চলবে না, তবে লঞ্চ চলাচল সম্ভব। এর পর ২০২২ সালের এপ্রিলে লঞ্চ চলাচল উদ্বোধন করা হলেও নাব্য সংকটে এক মাসেই তা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২ লাখ টাকা করা হয়। এ ছাড়া বালাসী ও বাহাদুরাবাদ টার্মিনালে অফিস ভবন, পাইলট হাউস, পুলিশ ও আনসার ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, টুলস ভবন, ড্রাইভার রেস্টহাউস, যাত্রীছাউনি, টয়লেটসহ ১১টি অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করা হয়।